জুলাই ৬, ২০২১
হরিলুটের উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ: ধ্বংস হচ্ছে বনায়ন
নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ নির্মাণের নামে হরিলুট চলছে বলে জানা গেছে। সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত বেঁড়িবাধ সংস্কার কাজ পরিদর্শনে দেখা যায় বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিক মুনাফার আশায় ভেকু দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটায় বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বেঁড়িবাধ গুলো। এছাড়া ভিতরের পাশ এবং নদীর পাশের বনায়নের বড় বড় গাছ পড়ে থাকতে দেখা যায়। সম্প্রতি জায়কার অর্থায়নে শুরু হওয়া সংস্কার কাজ হাতে কোদালে নির্দেশনা থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে। ভেকু মেশিনের সাহায্যে গোড়া থেকে মাটি কাটায় অনেক জায়গায় ধস নামতেও দেখা যায়। এছাড়া ধ্বংস হচ্ছে চর বনায়নের লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গাছ ধ্বংসের ফলে যেমন ক্ষতি হচ্ছে বাঁধ, একই সাথে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। জায়কার অর্থায়নে বাঁধ সংস্কারের কাজ গ্যালাক্সী এসোসিয়েট, আনিতা এন্টারপ্রাইজ এবং মামুন সাহারা কাগজপত্রে কাজ পেলেও বাস্তবে তাদের দেখা নেই। উপজেলার মোট ১৫ কিঃ মিঃ বেঁড়িবাধ সংস্কারে ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এই প্রকল্পে। কাগজ কলমে তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও তা কয়েক হাত বদল হয়ে কাজ হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে। উপজেলার দাতিনাখালী ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা এভাবে কাজ করলে স্থায়িত্ব হবে না জানিয়ে বলেন,আমরা বার-বার এখানকার সাব ঠিকাদারকে বলা হলেও তিনি বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেননি। এছাড়া মূল ঠিকাদার এখানে না আসায় আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গাবাটি, ভামিয়ার শেষ ভাগ, পদ্মপুকুর উত্তর ঝাঁপা বড় কেওড়া বাগান পার হয়ে দুর্গা মন্দিরের সামনে পাতাখালীর সিমানায়,বুড়িগোয়ালীনির দাতিনা খালী,কৈখালীতে চলছে বেঁড়িবাধ সংস্কারের কাজ। বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দাতিনাখালিতে গিয়ে দেখা যায়, ওয়াপদার রাস্তার একেবারেই কোল ঘেষে কাটা হয়েছে মাটি।যা দিয়ে সংস্কার হচ্ছে ওয়াপদা।আর এই কাজের প্রতিবাদ করতে জড়ো হয়েছে শত শত মানুষ। প্রতিবেদককে সামনে পেয়ে এলাকার মানুষ তাদের বোবা কান্না চেপে না রাখতে পেরে প্রতবাদি কন্ঠে বলেন,দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও আমরা আমাদের বাপ দাদার ভিটামাটি টিকিয়ে রাখতে পারলেও ওয়াপদার বর্তমান যে অবস্থা তাতে করে আমরা টিকিয়ে রাখতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না। এসময় রফিকুল নামের একজন ব্যক্তি বলেন,আমরা সবাই মিলে একাধিকবার প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নেইনি ঠিকাদার কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ড। যেভাবে কাজ করছে তাতে করে পূর্বে বড় বড় দুর্যোগ হলেও বেঁড়িবাধ টিকে ছিল কিন্তু এবার তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। এসময় তিনি সহ এলাকাবাসী বাঁধের পাশে পড়ে থাকা গাছ গুলো দেখিয়ে বলেন। নিজেদের ভিটামাটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গাছগুলো সন্তানের মতো বড় করেছিলাম কিন্তু তা সব শেষ করে ফেলেছে। এসময় তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, যেভাবে বাঁধের কাজ হচ্ছে তাতে করে কতদিন টিকে থাকবে জানি না। তিনি আরো বলেন, উপক‚ল বাসী মনে করেছিলেন তাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে তবে তা দুঃস্বপ্নে রুপান্তরিত হবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, নদীর পাশ এবং ভিতর পাশ উভয় পাশের মাটি যেভাবে কাটা হচ্ছে তাতে এই বাঁধ স্থায়ী বাধের জায়গায় ক্ষনস্থায়ী হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি জাকির হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে এখনি ঠিকাদারের সাথে কথা বলবো। যদি তারা নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ করা হবে। ষাটের দশকে কাজ হওয়া বেঁড়িবাধ সংস্কারের হওয়া না হওয়া নিয়ে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন বিভিন্নভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাঁধের স্বপ্ন দেখলেও তা আজ বিফলে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এলাকার মানুষকে গায়েবি আওয়াজ দিয়ে সরকারের বৃহৎ উন্নয়নকে থামিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন সুশীল সমাজের মানুষেরা। 8,412,327 total views, 480 views today |
|
|
|